‘আন্দোলনের ভাষা এত অশ্লীল! শ্রমিকদের মিছিলেও তো এরকম স্লোগান দিতে দেখি না, কুলিরাও তো এমন ভাষা ব্যবহার করেন না, এটা কোনো ভাষা? আন্দোলনের ভাষা! এত অশ্লীল!’
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালত বর্জন ও বিচারকের বিরুদ্ধে অশালীন স্লোগানের ঘটনায় ২১ আইনজীবীর বিষয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট এমন মন্তব্য করেন।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আন্দোলনে যোগ দেওয়া আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে এমন মন্তব্য করেন। এরপর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
আদালতে এদিন ২১ আইনজীবীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য মোহাম্মদ এম. সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের নামে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বিচারকাজ বিঘ্ন সৃষ্টি করার অভিযোগে গত ১০ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি তাদের তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। সে তলবে সোমবার তারা আদালতে হাজির হন।
শুনানির শুরুতে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘২১ জন হাজির হয়েছেন। আদালত অবমাননার আরেকটি বিষয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখ রয়েছে। দুটি রুলের একসঙ্গে শুনানি হোক।’
তখন আদালত বলেন, ‘দুটি ঘটনা এক না। ওইটা ছিল এক ধরনের ইনসিডেন্ট, এটা আরেক ধরনের ইনসিডেন্ট। ওইটা ছিল অ্যারোগেন্সি, বেয়াদবি। আর এটা হচ্ছে অশ্লীল। কোনো ভদ্রলোক, এসএসসি পাশ করা লোকও এরকমটা বলেন না।’
আদালত আরও বলেন, ‘২১ জনের মধ্যে দুজন শিক্ষানবিশ আছেন,তারা কারা? তখন দুজন ডায়াসের সামনে আসলে আদালত তাদের নাম, কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আইন পাশ করেছেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে কোন আইনজীবী অধীনে আছেন, তা জানতে চান।’
জবাবে একজন নিজেকে শফিকুল ইসলাম এবং আরেকজন কাজী ইকবাল নামে পরিচয় দিয়ে আদালতের প্রশ্নের উত্তর দেন।
এসময় এ দুই শিক্ষানবিশ ও তাদের পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘অশ্লীল স্লোগান! কমলাপুরের কুলিরাও তো এমন করেন না। এগুলো কোনো ভাষা? সমস্ত আইনজীবী শ্রেণির লজ্জিত হওয়া উচিত। কালো পোশাকধারী কোনো ব্যক্তি এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারেন? শ্রমিকদের মিছিলেও তো এরকম স্লোগান দিতে দেখি না। এটা কোনো রাজনৈতিক ভাষা? আন্দোলনের ভাষা! এত অশ্লীল!’
তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল বলেন, ‘সময় দেন (আদালত অবমাননা রুলের ব্যাখ্যা দিতে), তারপর বিষয়টি আসুক।’