ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’ নামে এক মার্কিন সংস্থা শেয়ার বাজারে ব্যাপক অনিয়ম ও হিসাবে কারচুপির অভিযোগ এনেছে। অভিযোগ খণ্ডন করতে আদানি গ্রুপের দেয়া বক্তব্যের চেয়েও, তারা যেভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে তা ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আদানি শিল্পগোষ্ঠীর চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) যুগশিনদার সিং ভারতের একটি বিশাল তেরঙ্গা জাতীয় পতাকাকে পেছনে রেখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ওই বিবৃতিটি দিয়েছেন।
গণমাধ্যম সংস্থা ব্লুমবার্গের ভাষায় ‘তাকে দেখে একটি কোণঠাসা ও অভিযুক্ত কোম্পানির কর্মকর্তা মনে হচ্ছিল না, বরং মনে হচ্ছিল ভারত সরকারের তরফেই কেউ যেন বক্তব্য পেশ করছে।’
ওই ভিডিও-বিবৃতির মধ্যে দিয়ে আদানি গ্রুপ যে বার্তা দিয়েছিল তাও পরিষ্কার, একটি বিদেশী সংস্থা (ফরেন এনটিটি) যদি আদানিকে আক্রমণ করে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে তারা ভারতকেই নিশানা করতে চাইছে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা ও আদানি শিল্পগোষ্ঠীর প্রসার যেরকম সমার্থক হয়ে উঠেছে, তার ভিত্তিতেই তারা এতটা জোরের সাথে ওই দাবিটা করতে পারছে। পাশাপাশি এই তথ্যও ক্রমশ প্রকাশ পেয়েছে যে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বীমা সংস্থাগুলোরও আদানি শিল্পগোষ্ঠীতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে।
শেয়ার বাজারে প্রভাব
আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয় শিল্পপতি ও শেয়ার বাজারের বিশেষজ্ঞ বিপ্লব পাল কিন্তু মনে করছেন, এই হিন্ডেলবার্গ বিতর্কের জেরে ভারতের শেয়ার বাজারে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
তিনি বলেন, ভারতের শেয়ার মার্কেটে অ্যাক্টিভিস্ট শর্ট সেলার কম। ফলে ভারতের শেয়ার মার্কেটে জালিয়াতির সম্ভাবনা শতকরা একশো ভাগ। এর কারণ হল- ভারতের মার্কেট কন্ট্রোলাররা সবাই রাজনৈতিক পার্টির সমর্থনে ক্ষমতায় আসে। আদানির জালিয়াতি ভারতের মার্কেট কন্ট্রোলার (সেবি) ধরতে গেলে, সেবির চেয়ারম্যানের চাকরি নিয়ে আগে টানাটানি পড়বে।
বিপ্লব পাল বলেন, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতে মার্কেট কনফিডেন্স ফেরাতে হিন্ডেনবার্গ যে আহ্বান জানিয়েছে, ভারতে অ্যাক্টিভিস্ট শর্ট-সেলাররা আরো সক্রিয় হোক, যারা করপোরেট জালিয়াতি ধরবে এবং তার থেকে শর্ট সেলিং করে লাভ করবে। তা হলে কিন্তু মার্কেটের ওপর বিশ্বাস অনেক বাড়বে।
তবে পাশাপাশি তিনি এটাও বলছেন, আদানি গোষ্ঠীর দেউলিয়া হবার প্রায় সম্ভাবনা নেই, কারণ তাদের পোর্ট এনার্জি সিমেন্টের ব্যবসা বেশ ভাল রকম লাভেই চলে। শেয়ারের দাম কম হলেও, তারা মনোপলি ব্যবসার জন্য ধার শোধ করতে এখনো সমর্থ। সুতরাং জনগনের টাকা মার যাবে, ওই ভয় এখন নেই। আদানি কিন্ত ইনফ্রাস্টাকচারে টাকা ঢেলে টাকার সদ্বব্যবহার করেছে, যেটা ভারতের সবচেয়ে বেশি দরকার। ফলে স্বল্পমেয়াদে হয়তো ভারতের খুচরা বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়বে, এসবিআই বা এলআইসির মতো কোম্পানিগুলোও কিছুটা বিপদের সম্মুখীন হবে। কিন্তু আদানি শিল্পগোষ্ঠীকে ঘিরে এই বিশাল বিতর্কের পরিণতি শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে তা আন্দাজ করা সত্যিই মুশকিল!
সূত্র : বিবিসি