আজ- রাত ৪:০৫, বর্ষাকাল | সোমবার | ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জিলহজ, ১৪৪৫ হিজরি |
Home » Blog » শাসক হয়েও সাধারণ ছিলেন ওমর

শাসক হয়েও সাধারণ ছিলেন ওমর

০ comment views
Social Share

হজরত উমর (রা.) খলিফা হিসাবে উচ্চতম মর্যাদা লাভ করার পর হৃদয়ের উষ্ণতা আর নম্রতায় সবাইকে মুগ্ধ করে নেয়।

ইসলামি রাষ্ট্রের মূলনীতি প্রতিষ্ঠিতকরণের কাজে হজরত উমর (রা.) বিখ্যাত হয়েছিলেন। সেই যুগে বিরাজমান আদর্শ হিসাবে, খলিফা হওয়ার বিষয়টি তাকে সম্পদ ও ক্ষমতার অপরিমেয় অপব্যয় ও ভোগবাদী জীবনের দিকে পরিচালিত করতে পারত।

অতিকায় প্রাসাদে বসবাস, দরবার ও অন্যান্য বিলাস-ব্যসন যেমন, চাকচিক্যময় পোশাক এবং শত শত দাস-দাসী রেখে আরামআয়েশ করার দিকে ঝুঁকতে পারতেন তিনি। কিন্তু এসব কিছুই ছিল না এ মহান খলিফার মাঝে। সাদাসিধা জীবনযাপনকেই প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। তার পরিধানের কাপড় খুবই সাধারণ ছিল। তার অনুসারীদের মতোই সাধারণ খাবার খেতেন তিনি।

একবার তিনি বলেছিলেন, ‘গ্রীষ্মে একটি এবং শীতে একটি জামা ছাড়া আল্লাহর এই মালসামানের কিছুই আমার জন্য নয়। যা হজের জন্য এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট। এর বাইরে, অন্য যে কোনো মুসলমানের মতোই আমার অতিরিক্ত কোনো অধিকার নেই’ (হেলমিনিস্কি, পৃ : ৪০৮)।

হজরত উমর (রা.) সম্পর্কে এ কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, তার একটি মাত্র জামা ছিল আর সেটাও ছিল তালি মারা। অন্য মুসলমানদের মতো খেজুর বা তালগাছের পাতায় তৈরি বিছানাতে তিনি ঘুমাতেন। সমাজের দরিদ্রতম ব্যক্তিদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা কতটুকু রয়েছে তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রায়ই তিনি রাতের আঁধারে মদিনার অলি-গলিতে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন। মানুষ কীভাবে ঘুমাচ্ছে, তাদের খাবার, পানি আছে কিনা, কাপড় আছে কিনা, তারা নিরাপদ আছে কিন্তু এসব দেখার জন্য তিনি (রা.) রাস্তায় টহল দিতেন।

এমনকি একদিন তিনি যখন রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন, তখন তিনি লক্ষ করলেন, এক মহিলা একটি হাঁড়িতে কিছু রান্না করছে আর তার সন্তানরা তাকে ঘিরে অপেক্ষা করছে। জিজ্ঞেস করে তিনি জানতে পারলেন, হাঁড়িতে কোনো খাবার নেই, সন্তানদের প্রবোধ দেওয়ার জন্য সেটি চুলায় চাপানো হয়েছে। আরও জানা গেল, দুদিন ধরে তারা কিছু খায়নি।

এ দৃশ্য দেখে হজরত উমর (রা.)-এর চোখে পানি চলে এলো। হজরত উমর (রা.) তৎক্ষণাৎ বাইতুল মালে চলে গেলেন এবং মহিলার জন্য খাদ্যদ্রব্য নিয়ে এলেন। একজন কর্মচারী সেগুলো বহন করতে চাওয়ায় হজরত উমর (রা.) তা প্রত্যাখ্যান করলেন এবং বস্তা স্বীয় স্কন্ধে তুলে নিয়ে বললেন, কেয়ামতের দিন আমার বোঝা কে বহন করবে? খাদ্যদ্রব্য সেই মহিলাটির কাছে পৌঁছে দিয়ে তিনি বললেন, সে যেন মাসোহারা নেওয়ার জন্য নিয়মিত বাইতুল মালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।

মহিলাটি হজরত উমরকে (রা.) চিনতে পারেনি। সে খুব খুশি হলো। তখন পর্যন্ত যেহেতু সে জানত না যে এ লোকটি কে, তাই সে চিৎকার করে বলল : ‘উমরের জায়গায় আল্লাহ তোমাকে খলিফা করুন’ (তাবারি, ১৪তম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ১১০-১১১)।

এতে হজরত উমর (রা.) কাঁদতে লাগলেন এবং আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলেন। তার লোকদের জন্য হজরত উমরের (রা.) কী রকম সমবেদনা ছিল এটি হচ্ছে তারই একটি চিত্র। আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, একবার গ্রিসের এক রাষ্ট্রদূত মদিনায় এসেছিল। ঘোড়া ও মালপত্র নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য সে রাস্তার লোকদের কাছে খলিফার প্রাসাদের খোঁজ চাচ্ছিল। এ কথা শুনে একজন দর্শক সেই রাষ্ট্রদূতকে কী বলেছিলেন তা লিপিবদ্ধ করেছেন জালালুদ্দিন রুমি এভাবে, ‘তার কোনো প্রাসাদ নেই। উমরের একমাত্র প্রাসাদ হলো তার অত্যুজ্জ্বল আধ্যাত্মিকতা। আমিরুল মুমিনিন হিসাবে যদিও তিনি বিখ্যাত, তবুও গরিব লোকের মতো তার একমাত্র বাসস্থান হলো একটি কুঁড়েঘর’ (হেলমিনিস্কি, পৃ : ১৫৯)।

হজর উমর (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, নিজের বিনয় বজায় রাখার জন্য তিনি নিজের কাজ নিজেই করতেন, খাদেমদের হাত লাগাতে দিতেন না।

ইসলামি শাসনব্যবস্থার অধীনে বসবাসকারী অমুসলিমদের প্রতিও তিনি ভালোবাসা ও সমবেদনা প্রদর্শন করেছেন। তিনি যখন সিরিয়ায় গিয়েছেন, তখন তিনি এক বৃদ্ধকে দেখলেন পথে-পথে ভিক্ষা করতে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন সেই বৃদ্ধ একজন ইহুদি। তিনি বিচলিত হলেন এবং সিরিয়ার গভর্নরকে বললেন সেই বৃদ্ধকে দেখাশোনা করার জন্য। কারণ, এটা তার কাজেরই অংশ। অধীনস্ত প্রজাদের আবেগ-অনুভূতির ব্যাপারে তিনি (রা.) খুবই সচেতন ছিলেন। একবার মিসরের গভর্নরকে তিনি তিরস্কার করেছিলেন এ বলে যে, ‘আমরা আবার কবে থেকে জনগণকে দাসে পরিণত করলাম যখন কিনা তারা জন্মসূত্রে মুক্ত ও স্বাধীন?’

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

Leave a Comment

ফেইসবুক পেইজ

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহবুব হুসাইন; (B.Sc & M.S in Geology & Mining; Master’s in Mass Communication & Journalism From Rajshahi University)

অফিসঃ আশিক টাওয়ার ৩য় তালা, মুড়িপট্টি, সাহেব বাজার, রাজশাহী।
মোবাইলঃ +৮৮ ০১৭৪০-৮৭৬২৮৪
ইমেইলঃ mahabubgmining@gmail.com

তরুণ মাঝি পরিবার

নির্বাহী সম্পাদকঃ- রিজভী আহমেদ
বার্তা সম্পাদকঃ- আব্দুল অলিম রনি

যোগাযোগের ঠিকানা

প্রধান ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ

ললিতাহার, খড়খড়ী-৬২০৪, চন্দ্রিমা, রাজশাহী।
মোবাইল:- +৮৮ ০১৫১৫-২২৮০০৫
ইমেইলঃ torunmajhitv@gmail.com

উপদেষ্টা মন্ডলী

মোঃ মনিরুজ্জামান স্বাধীন
প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল ওয়াকিল

@ 2023 – All Right Reserved torunmajhi.com | Design & Developed by CBA IT