আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৪ আসামির মধ্যে যারা খালাস পেয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীও। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজনকে খালাস দেওয়ার পাশাপাশি কয়েকজনের দণ্ড কমানো হয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান।
আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী মোহাম্মদ আহসান ও মোহাম্মদ শিশির মনির। এ ছাড়া পলাতক আসামির পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাসনা বেগম।
জামায়াতের সাবেক আমিরের বিষয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আমরা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে ছিলাম। তিনি মৃত্যুবরণ করায় মামলাটা অ্যাবেট হয়ে গেছে। কিন্তু যে জরিমানা ছিল, সেটা থেকে অন মেরিটে খালাস করে দিয়েছেন আদালত। ফলে এ মামলায় তিনি খালাস পেলেন।
আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, সমস্ত আসামিদের ফাঁসি! আমার মনে হয় আমার ওকালতি জীবনে এমন কমই দেখেছি। এ অস্ত্র পাখির মুখ থেকে পড়েনি এটা ঠিক। কারা এনেছে, রাষ্ট্রপক্ষ তাদের তদন্তে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, জান্নাতবাসী মতিউর রহমান নিজামী। ওনার পক্ষে আমার বক্তব্য ছিল– তিনটা পেপার বুক মিলে যে হাজার হাজার পৃষ্ঠা, কোথাও তার বিরুদ্ধে সামান্যতম সাক্ষ্য নেই। যদিও তিনি আজ দুনিয়াতে নেই, তার আত্মা শান্তি পাবে যদি ন্যায়বিচারে তাকে নির্দোষ সাব্যস্তে খালাস দেওয়া হয়। আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে এসেছেন, ‘তার বিরুদ্ধে কিছু নেই, তাকে আমরা খালাস দিলাম। ’ দেয়ার ইজ নো এভিডেন্স এগেইনস্ট হিম। তার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী নেই।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক সংক্রান্ত দুটি মামলার মধ্যে চোরাচালান মামলায় (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমানের আদালত।
অস্ত্র আইনে দায়ের করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পান একই আসামিরা। এ ছাড়া অস্ত্র আটক মামলার অপর ধারায় আসামিদের সাত বছর কারাদণ্ড দেন বিচারক। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। পরে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন।
মতিউর নিজামী ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে কামিল এবং ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সঙ্গে যুক্ত হন। পরপর তিন বছর (১৯৬৬-৬৯) তিনি পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯১ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর হয়ে সংসদীয় আসন পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে গোলাম আযমের উত্তরসূরী হিসেবে নিজামী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে আবারো তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি কৃষিমন্ত্রী ও ২০০৩-২০০৬ সাল পর্যন্ত শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৯ জুন রমনা থানা পুলিশ প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার করে। সেই থেকে কারাবন্দী থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ২০১৬ সালের ১১ মে বুধবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।