মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্রগুলো বলেছে, সদ্য শেষ হওয়া তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনে দেওয়া ডিসিদের অনেক প্রস্তাবের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। আবার কিছু প্রস্তাব যেমন নাকচ করা হয়েছে, কোনো প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিবেচনায় নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
২৪ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে ডিসি সম্মেলন। ডিসিরা মাঠ প্রশাসনে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা সরাসরি ডিসিদের নানা দিকনির্দেশনা দেন। এ জন্য এই সম্মেলনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এর মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ ডিসি সম্মেলন হওয়ায় এই সম্মেলন নিয়ে বাড়তি নজর ছিল। শেষ দিনে জাতিকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) তৈরি থাকতে বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে তাঁদের ভূমিকাই প্রাধান্য পাবে, মুখ্য হবে।
তিন দিনের আলোচনার জন্য ডিসিদের পক্ষ থেকে আগেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে মোট ২৪৫টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বৈঠকে অংশ নেওয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ডিসিদের প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে আগেই প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যার যার সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো পাঠানো হয়েছিল। সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক আলোচনায় মন্ত্রী-সচিবদের পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের অবস্থান জানানো হয়। কেউ কেউ হয়তো কোনো কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার কথা বলেছেন। কেউ কেউ হয়তো বলেছেন কোনো কোনো প্রস্তাব তাদের রুলস অব বিজনেসে পড়ে না। আবার বাজেট সমস্যার কথাও কেউ কেউ বলেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবের বিপরীতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদি, কিছু মধ্যমমেয়াদি এবং কিছু দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, এখন সিদ্ধান্তগুলো কতটা বাস্তবায়িত হলো, সে বিষয়ে ফলোআপ করা হবে। প্রায় প্রতি মাসেই বিষয়টি ফলোআপ করা হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের রাজনীতি
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সূত্রমতে, দেশের প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই বেসরকারি। বর্তমানে সারা দেশে শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীন ২০ হাজার ২৭৭টি এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজ আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬০৮ জন। এ ছাড়া ২ হাজার ১৩৮টি এমপিওভুক্ত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ হাজারের বেশি শিক্ষক সরকার থেকে মূল বেতন পান। আরও দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিওভুক্ত হয়েছে। তবে এখনো এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে মূল বেতন পাওয়া শুরু করেননি। এ ছাড়া সারা দেশে এমপিওভুক্ত ৮ হাজার ২২৮টি মাদ্রাসা আছে। এগুলোতে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার।
এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এখন মূল বেতনের পুরোটা সরকার থেকে পান। এর সঙ্গে সামান্য কিছু ভাতা দেওয়া হয় তাঁদের। তবে বেসরকারি হওয়ায় তাঁরা সরাসরি রাজনীতি করার সুযোগ পান।
ডিসিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আচরণবিধিমালা করার প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছিল, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে পাঠদান কার্যক্রমে তাঁদের দায়সারা আচরণ দেখা যায়। বিধিমালা বা নীতিমালা থাকলে শিক্ষকতা পেশায় থেকে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করাও সম্ভব।
বিষয়টিকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, এটা করলে বরং বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকারীকরণের দাবি আরও পোক্ত হবে। তিনি মনে করেন, এটি হওয়া উচিত।
ডিসিদের এই প্রস্তাবের বিষয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে মতামত চাওয়া হয়েছিল। তাতে ভোটদাতা ছিলেন ২ হাজার ১৫৬ জন। তার মধ্যে ৯৪ শতাংশই ওই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।
তবে বেসরকারি শিক্ষকদের সংগঠনের নেতারা মনে করেন, এটা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের শামিল। তাঁদের বক্তব্য হলো, তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী সরকার আগে তাঁদের চাকরি জাতীয়করণ করুক। এরপর যদি সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বিধিমালা করে, তাহলে তাঁদের আপত্তি থাকার সুযোগ থাকবে না।