আজ- রাত ৩:০৪, বর্ষাকাল | শুক্রবার | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে জিলহজ, ১৪৪৫ হিজরি |
আজ- শুক্রবার, রাত ৩:০৪ | ৫ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Banner
Home » Blog » রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন?

০ comment views
Social Share

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় মূলত তিন ধরনের লোকজন বিরোধিতা করেছিলেন। ইতিহাসের আলোকে সবচেয়ে বিরোধী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম জানা গেছে। এ আলোচনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন আছেন। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।

কথা সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন মূলত-বিরোধিতা করেছিলেন তিন ধরনের লোকজন।

এক. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক।

দুই. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে। পূর্ববঙ্গে প্রাইমারি এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়ানা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারি বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারি বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চাননি।

তিন. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।

লেখক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ তার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বইয়ে লিখেছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বাঙালি মুসলমানদের ক্ষোভ ছিল ১৯০৫-এ পূর্ব বাংলা এবং আসাম প্রদেশ গঠনের অনেক আগে থেকেই। … ক্ষোভের কারণ শুধু হিন্দু প্রাধান্য নয়, শিক্ষাক্রমে হিন্দুধর্ম প্রাধান্য পাওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

সৈয়দ আবুল মকসুদের এ বইতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম উঠে এসেছে। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন বলে উল্লেখ করা হয়।

ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।

এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বইতে উঠে এসেছে, লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন?

শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তীতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন।

যারা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করেছিলেন, তারা স্বপক্ষে দালিলিক কোনো তথ্য প্রমাণ দেননি। সেই সময়কার সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা এবং রবীন্দ্রনাথের যাদের সঙ্গে উঠাবসা ছিল তাদের কয়েকজন ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে। তাই অনেকেই লিখেছেন তিনিও এর বিপক্ষেই ছিলেন।

সৈয়দ আবুল মকসুদ তার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বইয়ে লিখেছেন, শ্রেণিস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের (লর্ড কার্জন) ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন, তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশিরভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ।

আবার যারা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি, তারা এর স্বপক্ষে বেশ কিছু ঘটনা এবং দিন তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন, কেউ কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থিত না করেই লিখিতভাবে জানাচ্ছেন যে, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়। ও রকম একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব, কেননা সেদিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন না।

তিনি বলেন, ১৯১২ সালের ১৯ মার্চ সিটি অব প্যারিস জাহাজযোগে রবীন্দ্রনাথের বিলেতযাত্রার কথা ছিল। তার সফরসঙ্গী ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মিত্র জাহাজে উঠে পড়েছিলেন, কবির মালপত্রও তাতে তোলা হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু আকস্মিকভাবে ওইদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাদ্রাজ থেকে তার মালপত্র ফিরিয়ে আনা হয়। কলকাতায় কয়েক দিন বিশ্রাম করে ২৪ মার্চ রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে চলে আসেন এবং ২৮ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে সেখানে বসে ১৮টি গান ও কবিতা রচনা করেন।

আবার সেই সময়কার সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হক বলছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে তিন শ্রেণির মানুষ বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে তৃতীয় কাতারে রাখতে চাই। কারণ তারা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু সমাজ। তাদের সঙ্গে বিশেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার বৈঠক, আলোচনা হয়েছে শিলাইদহ যাওয়ার আগেও। এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে চাই সেখানে পূর্ববঙ্গের সার্বিক উন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে এরও কোনো স্পষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকায় যারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা যে হয়েছিল নানা পক্ষ থেকে সেটা ইতিহাস ঘাটলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আবশ্যকতা রয়েছে সেটা বোঝাতে এবং প্রতিষ্ঠার ব্যাপার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন যারা তাদের কথা না বললেই নয়।

এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু হলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন। অন্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন। এদের মধ্যে ঢাকার বালিয়াটির জমিদার অন্যতম। জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তার বাবা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Comment

ফেইসবুক পেইজ

সম্পাদক ও প্রকাশক

মোঃ মাহবুব হুসাইন; (B.Sc & M.S in Geology & Mining; Master’s in Mass Communication & Journalism From Rajshahi University)

অফিসঃ আশিক টাওয়ার ৩য় তালা, মুড়িপট্টি, সাহেব বাজার, রাজশাহী।
মোবাইলঃ +৮৮ ০১৭৪০-৮৭৬২৮৪
ইমেইলঃ mahabubgmining@gmail.com

তরুণ মাঝি পরিবার

নির্বাহী সম্পাদকঃ- রিজভী আহমেদ
বার্তা সম্পাদকঃ- আব্দুল অলিম রনি

যোগাযোগের ঠিকানা

প্রধান ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ

ললিতাহার, খড়খড়ী-৬২০৪, চন্দ্রিমা, রাজশাহী।
মোবাইল:- +৮৮ ০১৫১৫-২২৮০০৫
ইমেইলঃ torunmajhitv@gmail.com

উপদেষ্টা মন্ডলী

মোঃ মনিরুজ্জামান স্বাধীন
প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল ওয়াকিল

@ 2023 – All Right Reserved torunmajhi.com | Design & Developed by CBA IT