
উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মোটেও পরিসংখ্যানটা পক্ষে ছিল না নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের। ২০১৪-১৭ চার আসরেই লস ব্লাঙ্কোসদের কাছে হেরে তারা বিদায় নিয়েছিল। এর মধ্যে দু’বারই ফাইনালে। এবার শেষ ষোলোর প্রথম লেগেও সেই ফল পাল্টাতে পারেনি। পিছিয়ে পড়ার পর সমতা টানলেও, রক্ষণাত্মক ফুটবলে রিয়ালকে আটকাতে ব্যর্থ অ্যাতলেটিকো। কার্লো আনচেলত্তির দল জিতল ২-১ গোলে।

দুই দলের সর্বশেষ দুই দেখায় ড্র করায় চ্যাম্পিয়ন্স মাদ্রিদ ডার্বি বাড়তি রোমাঞ্চ ছড়িয়েছিল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শুরুটা তেমনই আভাস দিয়েছিল। অন্তত প্রথমার্ধ পুরোটা জুড়েই ছিল সমান লড়াই। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর স্বাগতিক রিয়ালের সঙ্গে টক্কর দিয়ে পারল না অ্যাতলেটিকো। রিয়ালের হয়ে একটি করে গোল করেছেন রদ্রিগো গোয়েস ও ব্রাহিম দিয়াজ। অন্যদিকে, অ্যাতলেটিকোর হয়ে অসাধারণ এক গোলে ব্যবধান কমান হুলিয়ান আলভারেজ।
বল দখলে রিয়াল-অ্যাতলেটিকো সমান তালে লড়লেও, শেষদিকে রিয়াল একপেশে নিয়ন্ত্রণ নেয়। ফলে তাদের ভাগে বল থাকে ৫৩ শতাংশ। পুরো ম্যাচে রিয়াল ১৩ শটের মধ্যে ৭টি লক্ষ্যে এবং গ্রিজম্যান-আলভারেজদের অ্যাতলেটিকো ৬টি শট নিয়ে মাত্র ২টি লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়।
এদিন ম্যাচে পাওয়া প্রথম সুযোগেই বাজিমাত করেছেন রদ্রিগো গোয়েস। চতুর্থ মিনিটেই ফেদে ভালভার্দের পাস ধরে বাঁকানো দৌড়ে দুজনকে কাটিয়েছেন। এরপর বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে অ্যাতলেটিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাককে সুযোগ না দিয়েই বল জালে জড়ান এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। সর্বশেষ ৯ ম্যাচে পঞ্চম গোল পেলেন রদ্রিগো। ডিফেন্সিভ খেলতে থাকা সফরকারীদের রক্ষণে মিনিট কয়েকের ব্যবধানে আরও দু’বার হানা দেয় রিয়াল।
অন্যদিকে, দিয়েগো সিমিওনের দল খোলস ছেড়ে বের হয় পঞ্চদশ মিনিটের পর। কয়েকটি আক্রমণ সাজিয়েও তারা ঠিক কাজের কাজ করতে পারেনি। ২৭ মিনিটে প্রথম ভালো আক্রমণ বানানোর পর অ্যাতলেটিক মিডফিল্ডার হাভিয়ের গ্যালান সতীর্থকে লিনোকে বল বাড়ান গোলবারে, শটটি কোর্তোয়া মিস করলেও ক্লিয়ার করেন ভালভার্দে। এরপর আরও কয়েকটি আক্রমণের পর সফরকারীরা ম্যাচে সমতা টানে ৩২তম মিনিটে।
বাঁ পাশ দিয়ে কামাভিঙ্গা ও রদ্রিগোকে কাটিয়ে বক্সের মাথা থেকে হুলিয়ান আলভারেজ ডানপায়ের দুর্দান্ত শটে থিবো কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান। লাফিয়েও কিনারা পাননি রিয়াল গোলরক্ষক। মুহূর্তেই স্কোরলাইন ১-১ পরিণত হয় এবং কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় বার্নাব্যুর রিয়াল শিবির। ম্যানচেস্টার সিটি থেকে অ্যাতলেটিকোয় যোগ দিয়ে ৯ ম্যাচে ৭ম গোল পেয়ে গেলেন আর্জেন্টাইন তারকা আলভারেজ।
বিরতির পর রিয়াল শুরু থেকেই ব্যবধান বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ৫৫ মিনিটে তারা কাঙ্ক্ষিত গোলটিও পেয়ে যায় তরুণ ব্রাহিম দিয়াজের পা থেকে। মেন্ডির কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে লাল জার্সিতে ঘেরা বেষ্টনিতে পড়ে যায় এই মরক্কান তারকা, সেই জটলার মাঝেই হালকা কাটিয়ে ফাঁকা জায়গা খুঁজে মাটি কামড়ানো শট নেন দিয়াজ। মিনিট চারেক পর দারুণ সুযোগ তৈরি করেন আঁতোয়ান গ্রিজম্যান। তার নেওয়া শট রিয়াল ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিলেও কোর্তোয়ার বাধা পেরোতে পারেনি।
শেষদিকে ম্যাচ অনেকটাই রিয়ালের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। গোল শোধ করার বদলে বদলি প্লেয়ার নামিয়ে উল্টো রক্ষণে শক্তি বাড়াতে থাকেন অ্যাতলেটিকো কোচ সিমিওনে। এরপর রিয়ালের রক্ষণে প্রতিপক্ষের হানা পড়েছে ঠিক, কিন্তু ৬১ মিনিটের পর তারা গোলের জন্য কোনো শটই নিতে পারেনি। ফলে বড় কোনো পরীক্ষায় পড়তে হয়নি কোর্তোয়াকেও। বরং রিয়াল ব্যবধান বাড়ানোর কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে। যদিও স্কোরলাইন আর বদলায়নি। কার্যত ভিনিসিয়ুস-এমবাপে ফিনিশিং দিতে পারেননি অ্যাতলেটিকোর রক্ষণ ভেঙে। তবুও ২-১ গোলের জয় নিয়ে অ্যাতলেটিকোর বিপক্ষে প্রথম লেগ শেষ করল রিয়াল মাদ্রিদ।