দেশের ভোগ্য পণ্যের বাজারে বড় প্লেয়ার হয়ে উঠেছে রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপ। গ্রুপটি গম, মসুর ডাল, মটর ডাল ও সয়াবিন মিলসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশের মোট গম আমদানির ২৪.৪৭ শতাংশ, মসুর ডালের ৪৯.৩৫ শতাংশ, মটর ডালের ৫৬.৮৩ শতাংশ হয়েছে নাবিল গ্রুপের মাধ্যমে।
তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা অঞ্চল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এ সময়ে গ্রুপটির আমদানিকৃত পণ্যের মোট মূল্য ছিল ১২১ কোটি ডলার। গ্রুপটি এখন বিলিয়ন ডলার বা শতকোটি ডলার ক্লাবের অন্যতম সদস্য।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে শুধু পণ্য আমদানি নয়, কিছু ভোগ্য পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমেও বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নাবিল গ্রুপের কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে চাল উৎপাদনে এই গ্রুপ দেশের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। নাবিল গ্রুপ বর্তমানে দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। গ্রুপটির দৈনিক চাল উৎপাদক্ষনের সক্ষমতা ১ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ১ হাজার ৭২৮ মেট্রিকটন উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে শীর্ষে আছে সিটি গ্রুপ। উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নাবিল গ্রুপ নতুন ইউনিট স্থাপন করছে বলে জানা গেছে।
সূত্র অনুসারে, নাবিল গ্রুপের তিনটি কোম্পানি সর্বশেষ অর্থবছরে দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ১৩ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা (১২১ কোটি ডলার) মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে নাবিল অটো ফ্লাওয়ার মিল আমদানি করেছে ৭ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য। নাবিল নাবা ফুডস লিমিটেড ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে। নাবিল ফিড মিলস লিমিটেডের আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য ছিল ২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।
পণ্যভিত্তিক আমদানির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে দেশে ৮০ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। নাবিল গ্রুপ মোট গমের ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ আমদানি করে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি গ্রুপ আমদানি করেছে১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ গম। তৃতীয় স্থানে থাকা মেঘনা গ্রুপের আমদানির পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ সময়ে আকিজ গ্রুপের মাধ্যমে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আবুল খায়ের গ্রুপের মাধ্যমে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ পণ্য আমদানি হয়েছে। সরকারসহ বাকী আমদানিকারকদের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ৩৪ দশমিক ০২ শতাংশ গম।
আলোচিত সময়ে দেশে মসুর ডালের প্রায় অর্ধেকই আমদানি করেছে নাবিল গ্রুপ। এ সময়ে ৬ লাখ ৫৭ হাজার টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এর ৪৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ আমদানি করেছে নাবিল গ্রুপ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ ডাল আমাদিন করেছে সিটি গ্রুপ। চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপ আমদানি করেছে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ ডাল। বাকী ২৪ দশমিক ৩১ শতাংশ ডাল আমদানি হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
মটর ডালের ক্ষেত্রে অর্ধেকেরও বেশি আমদানি হয়েছে নাবিল গ্রুপের মাধ্যমে। বছরের প্রথম আট মাসে দেশে মোট ৫ লাখ ৩৯ হাজার টন মটর ডাল আমদানি হয়েছে। নাবিল গ্রুপ আমদানি করেছে মোট মটর ডালের ৫৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আকিজ গ্রুপ আমদানি করেছে ১৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ মটর ডাল। বাকী ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ মটর ডাল আমদানি করেছে সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে ১৪ লাখ ৫৫ হাজার টন সয়াবিন মিল আমদানি হয়েছে। এর ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে তৃতীয় বৃহৎ আমদানিকারকের অবস্থানে ছিল নাবিল গ্রুপ। সয়াবিন মিলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক ছিল মেঘনা গ্রুপ। এ গ্রুপের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ২৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ সয়াবিন মিল। সিটি গ্রুপের অংশ ছিল ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এ বিষয়ে নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আমিনুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, তারা ব্যবসার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ চেইনকে মসৃন রাখার চেষ্টা করছেন। এছাড়া স্থানীয়ভাবে ডিমসহ পোল্ট্রিপণ্য, চাল ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ বের করে নেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্কে কিছু ভুল বুঝাবুঝি আছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ব্যাংকের অর্থায়ন খুবই জরুরি। অন্যদিকে অর্থায়ন করাই হচ্ছে ব্যাংকের প্রধান ব্যবসা। নাবিল গ্রুপ সব সময় ব্যাংকিং আইন-কানুন মেনে একাধিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। ঋণের ক্ষেত্রে কখনো কোনো অনিয়ম বা কারসাজির আশ্রয় নেওয়া হয়নি। গ্রুপের প্রতিটি কোম্পানি নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত নাবিল গ্রুপ কোনো ঋণ পুনঃতফসিল করেনি। একটি ঋণও খেলাপি হয়নি। আগামীতেও নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধে তারা বদ্ধপরিকর।