‘রাজনৈতিক কারণে’ রাজশাহীতে প্রখ্যাত চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদকে খুন করা হয়। রাজশাহীর তৎকালীন দুই পুলিশ কর্মকর্তা বিজয় বসাক ও উৎপল কুমারকে ধরলেই মিলবে ডা. কাজেম খুনের সব প্রশ্নের উত্তর। খুনের ঘটনায় চিকিৎকরা এখনো আতঙ্কে রয়েছেন- বুধবার (৩০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন।
রামেকের শিক্ষক, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের রিউমাটলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞা। এ সময় ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) রাজশাহীর সভাপতি প্রফেসর ডা. ওয়াসিম হোসেন, ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম রাজশাহীর সভাপতি প্রফেসর ডা. কাজী মহিউদ্দিন আহমেদ, নিহত ডা. কাজেম আলীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডা. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে রামেকের ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞা বলেন, গত বছরের ২৯ অক্টোবর নগরীর বর্নালি মোড়ে ডা. কাজেম আলী নির্মম ও নৃশংসভাবে খুন করা হয়। বিনয়ী ও সদালাপী মানুষ ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত কারণে তিনি খুন হননি। রাজনৈতিক কারণে তাকে খুন করা হয়েছে। তবে মামলার এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। খুনের বিচার নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
তিনি বলেন, ঘটনার সময়কার সিসিটিভি কাট করে নেওয়া হয়েছে। ওখানকার আগে-পরের ফুটেজ আছে। তবে ওই সময়ের ফুটেজ নাই। দোকানদার জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কয়েকটা এজেুন্সি নিয়ে গেছে। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করি এবং বলি, আপনারা তো ধরতে পারেন। কিন্তু তারা ধরছে না।
ডা. মুর্শেদ জামান মিঞা বলেন, খুনের ১৮ টা ইভেন্ট ঘটে। নরমাল খুনি এভাবে মারতে পারে না। তারা শিক্ষিত কিলার ছিল। নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে ঘটনা ঘটলো। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জন্য এটা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আওয়ামী লীগের দুজন লোক প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তাদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
এসময় রাজশাহীর দুজন পুলিশ কর্মকর্তার নাম বলেন ডা. মুর্শেদ। বলেন, পুলিশের বিজয় বসাক (অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, আরএমপি) এবং উৎপল কুমারকে (সাইবার ক্রাইম ইউনিট প্রধান, আরএমপি) ধরলে খুনের সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। পলিটিক্যাল কারণে খুন হয়েছে। ইন্ডিয়ান র এজেন্ট যুক্ত থাকতে পারে। ওই সময় আমাদেরও বলা হয়, আপনারা নিরাপত্তা নিয়ে চলেন। আমাদের গানম্যান নিয়ে চলতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক নেতারা বলেন, ওই সময় রংপুরেও একজন চেয়ারম্যান খুন হয়। ডা. কাজেম খুন সুপরিকল্পিত, ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা। ব্যক্তিগত কোনো ঘটনা দায়ী- এটা আমাদের মনে হয়নি। এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে যে ঘটনায় হোক, মানুষ হিসেবে খুন হয়েছে, কারা করলো এটার জানার ও বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। চার্জশিটও দিবে না, ঝুলিয়ে রাখবে- এটা হতে পারে না। আমরা এখনো কেউ নিরাপদ নই।বিচারের দাবিতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমরা কর্মবিরতিতে যেতে পারি। তবে জনস্বার্থ দেখতে হয়, আবার আমাদের স্বার্থও দেখতে। সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে পারি না।
এদিন দুপুরে রামেকে ডা. কাজেম আলী স্মরণে শোক সভা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজশাহীর সর্বস্তরের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।