গ্যাস সংকটে রাজধানীর বাসা-বাড়িতে রান্নার চুলা জ্বলছে না। একই পরিস্থিতি শিল্পেও। গ্যাসের অভাবে স্বাভাবিক সময়ের মতো কারখানা চালানো যাচ্ছে না, কমছে শিল্পের উৎপাদন। পরিবহন খাতও ভুগছে গ্যাস সংকটে।
রাজধানীর বাসিন্দারা জানান, গ্যাস সংকটের কারণে সারা দিনেও চুলা জ্বলে না। গত তিনদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। শুধু রাজধানীই নয় ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদী, ময়মনসিংহসহ অন্যান্য এলাকার বিভিন্ন কারখানাতেও ভয়াবহ গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।
তীব্র গ্যাস সংকটের কারণ হিসেবে তরুণমঝিকে তিতাস জানিয়েছে, একটি এলএনজি স্টেশন পুরোপুরি বন্ধ থাকায় চাহিদার তুলনায় ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস এই মুহূর্তে কম সরবরাহ হচ্ছে’ আজ এবং আগামীকাল রোববারের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশাও প্রকাশ করেছে
সংস্থাটি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকটের চিত্র বছরজুড়ে থাকে। অথচ গ্যাস না পেলেও অনেককে গ্যাসের নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে এলপিজি সিলিন্ডার কিংবা অন্য উপায়ে রান্নার জন্য বাড়তি ব্যয়ও করতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় চাপে এবং চাহিদামতো গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
প্রতি বছর শীতকালে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এ বছরও গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় গ্যাসের চাপ কম, কোথাও সারাদিন চুলা জ্বলে মিটমিট করে, আবার কোথাও জ্বলছেই না চুলা। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। গ্যাস সরবরাহ কম থাকার কারণে নিয়মিত গ্যাসের চাপ কম থাকছে, বছরজুড়েই দিনের অর্ধেকের বেশি সময় গ্যাস সংকট থাকে মগবাজার, নয়াটোলা, মধুবাগের বিভিন্ন অলিগলিতে।
গত দুদিন ধরে এসব এলাকাগুলোয় রীতিমত হাহাকার চলছে মোহাম্মদপুর, কামরাঙ্গীরচর, মহাখালী, পল্লবী, কাফরুল, শেওড়াপাড়া, মিরপুর- ১০. রায়েরবাগ, ভূতের গলি, গ্রিনরোড, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, শান্তিনগর, মানিকনগর, বাসাবো, আরামবাগ, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা ও মুগদাসহ উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের সংকট চলছে প্রতিদিনই। এছাড়া যেসব এলাকায় গ্যাস রয়েছে, সেখানেও অল্প চাপ বিরাজ করছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহরের বাসিন্দারা।
মগবাজারের আমবাগানের বাসিন্দা গৃহিণী সাবিহা সুলতানা বলেন, ‘সারা বছরই গ্যাস সংকট থাকে। সকাল ৯টার পরে আসে। কিন্তু গত দুদিন ধরে গ্যাসই আসে না। গতকাল রাত ১১টার পরে গ্যাস এসেছে।’রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার গৃহিণী তাসমীমা কাশেম বলেন, শীত আসার পর থেকে ঠিকমত দিনের বেলায় রান্না হয় না, যা রান্না করার নবান্না করতে হয় রাতে, সেগুলোই আমরা সারাদিনে খাই। ভাত-তরকারি গরম করার শ্যাসও থাকে না বলতে গেলে। প্রতিদিন ভোরের দিকে গ্যাস চলে যায়, আর ফিরে আসে বিকাল ৩টার পর।’
তীব্র গ্যাস সংকটের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
ফেসবুকে সালাউদ্দিন নামের একজন লিখেছেন, পশ্চিম শেওড়াপাড়া, মিরপুরে কয়েকদিন ধরে গ্যাস নেই।
তার পোস্টের মন্তব্যের ঘরে আবু আবদুল্লাহ আল শাফি লিখেছেন, ‘আরে ভাই গ্যাসের কথা আর বইলেন না, এ যেন ডুমুরের ফুল। কাল রাত একটার সময় রান্না করে খাওয়া লাগছে।’
এমনকি এ বছরে গ্যাস সংকটের অভিযোগের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের আবাসিক ভবনগুলো। সেখানেও গত এক মাস ধরে টানা গ্যাস সংকট চলছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌ, মো. হারুনুর রশীদ মোয়াহ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকাকে বলেছেন, ‘গ্যাসের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম আছে। সাধারণত শীতে গ্যাসের চাহিদা বেশিই থাকে। এলএনজির একটা টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ থাকায় সরবারহ কম রয়েছে। প্রতিদিনের যে চাহিদা তার চেয়ে বর্তমানে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম সরবরাহ রয়েছে।
আজ শনিবার দুপুর থেকে এলএনজি চালু হলে আন্তে আছে গ্যাসের চাপ বাড়বে। পুরোপুরি সংকট কাটতে আরও লাগবে; দু-একদিন সময় কেননা গ্যাস চালু হলে তার প্রেসার বাড়তে সময় লাগে। আশা করছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা গত মাসখানিক ধরে আগের তুলনায় ভালো গ্যাস পাচ্ছিলাম। তবে গত তিন থেকে চারদিন হঠাৎ কমে গেছে। এতে উৎপাদনে বিশাল ক্ষতি হচ্ছে।
বিশ্ব বাজারে নিটওয়্যার রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রথম স্থানে যাওয়ার সুযোগ আছে। তবে এর জন্য গ্যাস-বিদ্যাৎ, আইনশৃঙ্খলা ও শ্রমিকদের অযাচিত দাবি- এসব সমাধান করা উচিত। পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে সংস্কার করতে হবে। তাহলে এক নম্বরে যাওয়ার সুযোগ আছে।’