চলতি বছরজুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিমান দুর্ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। আর এ জন্য বিমানযাত্রীদের কাছে ২০২৪ সালটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আকাশ যাত্রার ভয়াবহ এক বছর হিসেবে। গত সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরীয়, কানাডীয় ও আজারবাইজানি তিনটি বিমান ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রাণহানি হয় ২১৭ আরোহীর।
এসব ঘটনা ছুটি কাটাতে ইচ্ছুক পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। পরিসংখ্যানের দেখা যায়, সারা বিশ্বে লাখ লাখ বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মধ্যে বিমান দুর্ঘটনার হার খুবই কম। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক তথ্যেই এর প্রমাণ।
দক্ষিণ কোরিয়ায় গত রোববার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশটির জেজু এয়ারলাইন্সের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় বিমানটির ১৮১ আরোহীর ১৭৯ জনই নিহত হন। ১৯৯৭ সালের পর দেশটিতে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, চাকা না খোলা অবস্থায় বিমানটি সজোরে রানওয়েতে আছড়ে পড়ে। পরে প্রচণ্ড গতিতে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এটি নিরাপত্তা দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং এতে আগুন ধরে যায়।
দুর্ঘটনার কারণ এখনো স্পষ্ট হয়নি। তবে সিএনএনকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিমানটি অবতরণের সময় এর চাকা না খোলায় এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ আমেরিকার তদন্তকারীদের সহায়তা নিয়ে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করছেন।
রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতিতে বিমান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বোয়িং দুর্ঘটনায় ‘প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা’ জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্ঘটনায় পড়া বিমান কর্তৃপক্ষ জেজু এয়ারলাইন্সকে বোয়িং ‘সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত’।
এর আগের সপ্তাহে রাশিয়ার চেচনিয়ার গ্রোজনিগামী আজারবাইজানি একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩৮ জন নিহত হন। গ্রোজনিতে নামার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বিমানটি কাস্পিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী কাজাখস্তানের আকতাউ শহরে অবতরণে বাধ্য হয়। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে দুর্ঘটনাবশত বিমানটি গুলি করে নামানোর জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করছেন এর জন্য নের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আজারবাইজানের আলিয়েভ।
গত সপ্তাহেই রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট পুতিন আজারবাইজানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক ফোনালাপে বিমান দুর্ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে দুর্ঘটনার জন্য কোনো দায় স্বীকার করেননি।
এদিকে শনিবার রাতে কানাডায় এয়ার কানাডার একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে। ৭৩ যাত্রী নিয়ে বিমানটি পূর্ব কানাডার নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাবরাডোর প্রদেশের সেন্ট জনস থেকে নোভা ফোটিয়া প্রদেশের গফসের হ্যালিফ্যাক্স স্টেইনফিল্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছিল। দুর্ঘটনায় অবশ্য কোনো আরোহী হতাহত হননি।
এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমায় রোববার একটি হালকা আকাশযান দুর্ঘটনায় পড়ে সাগরে পতিত হয়। এই দুর্ঘটনায় বিমানটির আরোহী পাইলট ও কো-পাইলট দুজনই নিহত হন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালে মোট ৩০টি বিমান দুর্ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। পরিসংখ্যানগত দিক থেকে যা প্রতি ১২ লাখ ৬০ হাজার ফ্লাইটের মধ্যে একটি নিউ জার্সির এমরি-রিডল অ্যারোন্যাটিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ব্রিকহাউজ সিএনএনকে বলেন, ‘বিমানে চলাচলের চেয়ে বিমানবন্দরে গাড়িতে করে যাওয়ার সময়ই আপনি সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন। পৃথিবীর কিছু কিছু প্রান্তে বিমানে চড়ার চেয়েও লিফটে চড়া আপনার জন্য বেশি বিপজ্জনক।