মহান বিজয়ের মাসে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের পাতড্ডা গ্রামে খেতাবপ্রাপ্ত এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামী কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনও করেছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধের জেরে মুজিবুল হক কানুর বিরুদ্ধে আটটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে প্রায় ১০ বছর ধরে এলাকা ছাড়া ছিলেন ভুক্তেভোগী মুক্তিযোদ্ধা। বছরখানেক আগে বাড়ি ফিরলেও ঘর থেকে বের হতেন না তিনি। রোববার স্থানীয় বাজারে যাওয়ার জন্য বের হলে পূর্ববিরোধের জেরে তাকে অপদস্ত করা হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জামায়াত সমর্থক প্রবাসী আবুল হাসেমের নেতৃত্বে অহিদ, রাসেল, পলাশসহ ১০ থেকে ১২ ব্যক্তি ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গলায় জুতার মালা দিয়ে এলাকা এমনকি কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না বলে হুমকি দিচ্ছেন। এ সময় তিনি জুতার মালা সরিয়ে এলাকায় আর আসবেন না বলেও জানান। এ সময় তার ভিডিও ধারণ ও ছবি নেয়া হয়। ওই ব্যক্তিরা বলতে থাকেন ‘এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা? অন্যরা বলতে থাকেন তিনি কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, ছেড়ে দাও।’
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত আবুল হাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ভুক্তভোগীর স্ত্রী বলেন, বছরখানেক আগে এলাকায় এলেও বাসা থেকে তিনি বের হতেন না। গতকাল ওষুধ কিনতে স্থানীয় বাজারে যাচ্ছিলেন তিনি। তার হার্টে রিং পরানো আছে। ওষুধ কিনতে যাওয়ার পথে এভাবেই লাঞ্ছিত করা হয়। তিনি বলেন, এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী সবার কাছ থেকে শেষ বিদায় নিয়েছেন। বেঁচে থাকতে আর কোনোদিন এলাকায় ফিরবেন না জানিয়ে ফেনীতে এক নিকটাত্মীয়র বাড়িতে চলে গেছেন তিনি। এ ঘটনার পর তারা সকলে আতঙ্কে আছেন বলেও জানান তিনি।
অভিযুক্ত হাসেমের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে অপমান অপদস্ত করায় নিন্দার ঝড় বইছে সচেতন মহলে। এছাড়া এমন ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনারও দাবি উঠেছে।