সুখী ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে প্রফেসর ইউনূসের সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আসাদ আলাম সিয়াম। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৫৩তম বার্ষিকী আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব কথা কলেন তিনি।
প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত সিয়াম আরও বলেন, দীর্ঘ সংগ্রাম ও যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। চব্বিশের বিপ্লব পরবর্তী এবারের বিজয় উদযাপন ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রিক অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণও করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট নিকোল চিউলিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানায়। বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পেছনে যে ত্যাগ এবং সংগ্রাম তা পৃথিবীতে এক অনন্য নজির। বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশে দেখতে চায় উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকল বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে বৃহত্তম অংশীদার হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত।
সম্প্রতি জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংঙ্কেনের সাথে প্রফেসর ইউনূসের ফলপ্রসূ বৈঠকের কথা উল্লেখ করে নিকল বলেন, দুই দেশের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষায় দুই দেশের সহযোগিতা মূলক সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবে।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত (ডেজিগনেট) মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুধু স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম ছিলো না, এটি ছিল আমাদের পরিচয়, মর্যাদা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। আমাদের বিজয় কেউ উপঢৌকন হিসেবে তুলে দেয়নি বরং আমাদের অর্জন করতে হয়েছে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ জুলাইয়ের সফল বিপ্লব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই কখনোই শেষ হয় না। ১৯৭১ সালে আমরা বাইরের শোষণের বিরুদ্ধে লড়েছিলাম; ২৪ জুলাই আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি।
মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও বলেন, নোবেল জয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বের অধীনে আমাদের দেশ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মুশফিক বলেন, আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পর যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আজ আমরা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং শান্তির প্রতি যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করি। আমরা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও অটুট করার অঙ্গীকার করছি।
অতিথে দূতাবাসে সেবা নিতে আসা বাংলাদেশীরা নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, আশা করি দূতাবাসে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন থেকে ভালো ব্যবহার পাবেন। তিনি দূতাবাসে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের চৌকস কর্মীবাহিনী উল্লেখ করে বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা প্রয়োজনে দূতাবাসে এলে একটি গোলাপ দিয়ে বরণ করতে না পারলেও, অন্তত একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বরণ করুন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনিকা জেকবসেন, রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের পরিচালকসহ অনেকেই। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতিতে এতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।