বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ (১৪ নভেম্বর)। ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশ্ববাসীর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর দিবসটি পালন হয়। বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। দিবসটিতে এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিস: সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’। ডায়বেটিস নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রতিনিয়ত কাজ চললেও বেড়েই চলেছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, গত ৩০ বছরে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ৮০ কোটির বেশি হয়েছে। ল্যানসেট-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার প্রায় ৭% থেকে ১৪% এ উন্নীত হয়েছে, যেখানে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং এনসিডি-রিসসি এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই গবেষণাটি ডায়াবেটিসের বৈশ্বিক চিত্র এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরেছে। গবেষণাটিতে ১৪০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ এবং চিকিৎসার বৈচিত্র্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বৈষম্য বাড়ছে। ২০২২ সালে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগী মাত্র চারটি দেশে কেন্দ্রীভূত ছিল। এর মধ্যে ভারতের প্রায় ২১২ মিলিয়ন, চীনে ১৪৮ মিলিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রে ৪২ মিলিয়ন, এবং পাকিস্তানে ৩৬ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিলে যথাক্রমে ২৫ মিলিয়ন এবং ২২ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ ছয়টি দেশে ৬০% ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী
গবেষণায় আরও জানা গেছে, প্যাসিফিক দ্বীপপুঞ্জ, ক্যারিবিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশে ২৫ শতাংশের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিসের হার ১২.৫% এবং যুক্তরাজ্যে ৮.৮%, যা পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, স্পেন, সুইজারল্যান্ড এবং সুইডেনের মতো উন্নত দেশগুলোতে ২০২২ সালে নারীদের ডায়াবেটিসের হার ছিল ২-৪%, আর ডেনমার্ক, ফ্রান্স, উগান্ডা, কেনিয়া, মালাউই, স্পেন এবং রুয়ান্ডার পুরুষদের মধ্যে এই হার ছিল ৩-৫%।
বিশ্বজুড়ে স্থূলতা এবং বয়স বৃদ্ধির কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এই গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে ডায়বেটিস প্রতিরোধে আরও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন, যেন ভবিষ্যতের প্রজন্ম এই বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট থেকে সুরক্ষিত থাকে।
অঞ্চল ভেদে ডায়াবেটিসের প্রভাব এবং সচেতনতা তৈরি
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেয়েসাস বলেন, গত তিন দশকে ডায়াবেটিসের একটি ভয়াবহ বৃদ্ধি আমরা লক্ষ। আর এই রোগ স্থূলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচার, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব এবং অর্থনৈতিক দুর্দশার প্রভাবের বিষয়টিও তুলে ধরে।
বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশগুলোর জরুরিভাবে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এর শুরুটা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক কার্যকলাপকে নেয় মাধ্যমে হতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এমন একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করা যা প্রতিরোধ, প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম।
ইউরোপীয় ডায়াবেটিস গবেষণা সংস্থার প্রেসিডেন্ট শানতাল ম্যাথিও বলেন, বলা যায় ডায়াবেটিস এখন মহামারির রূপ নিয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির জন্য গভীর হুমকি সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, এখন বিশ্বের নীতি-নির্ধারকদের উচিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার গ্রহণের বিষয়টির দিকে নজর দেয়া। পাশাপাশি ডায়বেটিস পরীক্ষার সুযোগ সবার জন্য বৃদ্ধি করতে হবে। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশগুলোকে একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে।