বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জনগণের জানমাল আমাদের কাছে পবিত্র আমানত। আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে সব সময় দায়িত্বশীল আচরণ করে এসেছি। কিন্তু আমরা এ দেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত- নিপীড়িত রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর আমাদের দলকে দু’দফা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা বরাবরই পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে এসেছি। তারপরও আমাদের নিষিদ্ধ হতে হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, ‘গরম ভাতে বিড়াল বেজার’।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, নির্ভরতা আল্লাহর ওপরে, প্রবীণের অভিজ্ঞতা আর নবীনের মেধা শক্তির সমন্বয় দেশ এগিয়ে যাবে। যেখানে একজন তরুণ-তরুণীও বেকার থাকবে না। মামা বা খালু তালাশ করতে হবে না। দলীয় আনুগত্যের প্রশ্ন আসবে না। সে যে দলেরই হোক যে ধর্মেরই হোক। যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা সেই সমাজটা গড়তে চাই।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় ইতিহাস থেকে ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে গেছি। ১৯৭৫ সাল ছিল জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। ৭৫ এর জুন মাসের ৫ তারিখে জাতীয় সংসদে মাত্র পাঁচ মিনিটে বহু দলীয় গণতন্ত্র খতম করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম হয়েছিল। তখন ১৯টি জেলা ছিল ১৯ জেলা ১৯ জন গভর্নর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এই পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা পেলে বাংলাদেশের মানুষের আর কোনো বাক স্বাধীনতা ও ভোটের স্বাধীনতা থাকতো না।
জামায়াতে ইসলামী দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে বরাবর দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করার চেষ্টা করেছে দাবি করে জামায়াত আমির বলেন, কিন্তু আমরাই নিগ্রহের শিকার হয়েছি। একমাত্র সংগঠন জামায়াতকে স্বাধীন বাংলাদেশে দুই দফা আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় গিয়ে নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের অপরাধ কি? আমরা কি জমি দখল, চাঁদাবাজি, মা বোনের ইজ্জতে হাত দিয়েছি? আমরা কি দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছি? গুন্ডা বাহিনী লালন করি? আমরা কি মদ মাদকে হাত মেলেছি, সামাজিক কোনো অপকর্মের সঙ্গে না জড়িত থেকেও কেন দফায় দফায় নিষিদ্ধ করতে হবে। এটার মূল কারণ গরম ভাতে বিড়াল বেজার।
তিনি বলেন, যাদের রাজনীতিতে স্বচ্ছতা নেই, যাদের দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ, যারা দেশপ্রেমের কথা বলে প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা করেন তারাই দেশের স্বচ্ছ রাজনীতি পছন্দ করেন না। আমাদের মুখে কখনো কোনো দল বা মানুষকে নির্মূল করার স্লোগান শুনেননি, শুনবেনও না।৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণতায় নিতে হলে এমন রাষ্ট্র কাঠামো গড়তে হবে যেখানে প্রত্যেকটি নাগরিক নিজেকে মর্যাদাবান ভাববে। পুরুষ কিংবা নারী হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ কিংবা খ্রিষ্টান অথবা মুসলমান তিনি বিশ্বাস করবেন এটিই আমার প্রিয় বাংলাদেশ। শুধু ভোগ নয় ত্যাগও করতে হবে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন— কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগর কর্মপরিষদ সদস্য হেমায়েত হোসেন, ইয়াসিন আরাফাত, আতাউর রহমান সরকার, মাওলানা হাবিবুর।