বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ১১ ডিসেম্বর বৈঠক ডেকেছে ভারতের সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি। বর্তমানে এই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির সংসদ লোকসভার কংগ্রেস দলীয় আইনপ্রণেতা শশী থারুর। তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি কথা বলা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির বিরোধীদল কংগ্রেসের এই সংসদ সদস্য।
শুক্রবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন শশী থারুর। এএনআই বলছে, কংগ্রেসের এই এমপি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের পর প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
শশী থারুর বলেছেন, লোকসভার পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি আগামী ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক ডেকেছে। তিনি বলেন, ‘‘যদি ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু বলার থাকে, তাহলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যদি সংসদে এসে আমাদের বলেন, সেটি ভালো হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আমরা ১১ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির বৈঠক আহ্বান করেছি। বাংলাদেশে যা ঘটছে আমরা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন… সব সংখ্যালঘুর নিজ দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার পাওয়া উচিত।’’
কংগ্রেস দলীয় এই এমপি বলেন, ‘‘কিন্তু আমাদের এটা নিয়ে খুব বেশি কথা বলা ঠিক হবে না। কারণ এই বিষয়টি আমাদের দেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।’’ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির অনেকে তার অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
দেশটির বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য শশী থারুর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি কথা বলা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করলেও ভারতের সংসদে পরপর দু’দিন অর্থাৎ বৃহস্পতি এবং শুক্রবার বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের।
লোকসভায় সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের সরকার এসব ঘটনার বিষয় গুরুতরভাবে বিবেচনায় নিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে দিল্লির উদ্বেগ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক দুর্গাপূজা উৎসবের সময় মন্দির ও পূজা মণ্ডপে হামলার খবরও প্রকাশ্যে এসেছে… এই হামলার পর বাংলাদেশ সরকার শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন নিশ্চিতে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনসহ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা জারি করেছিল।’’
এদিকে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার ও সংখ্যালঘুদের নিয়ে শুক্রবার দিল্লিতে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়েও কথা বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে জয়সওয়ালকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেন।
এ সময় রণধীর বলেন, ‘‘হিন্দুদের ওপর হামলা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হুমকি এবং হামলার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে শক্তভাবে সার্বক্ষণিক উত্থাপন করছে ভারত। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিতের যে দায়িত্ব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে, সেটি তারা পালন করবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা চরমপন্থী বক্তব্যের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও উসকানিমূলক ঘটনাকে শুধু গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমরা বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই…।’’
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের অভিযোগে হিন্দু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়। এই মামলায় সোমবার বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করেন।
পরের দিন চট্টগ্রামের একটি আদালতে চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানি ঘিরে আদালত চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের হামলায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে চট্টগ্রামে এক আইনজীবী নিহত হন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মাতামাতি চলছে ভারতে। এছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বেড়ে গেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রচার করা হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে। যদিও এসব অভিযোগের বেশিরভাগই ভিত্তিহীন বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।