
রাফাসান আলম, রাবি প্রতিনিধিঃ
ডিসেন্ট্রালাইজড বা বিকেন্দ্রিত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীকতার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এলাকায় উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেললাইন অবরোধ করেছে রাবি শিক্ষার্থীরা। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কথা চিন্তা করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নিকট তিনদফা দাবি জানিয়ে আড়াই ঘণ্টা পর রেলপথ অবরোধ স্থগিত করলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ঢাকার রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বুধবার (৫মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন এলাকায় তারা এই অবরোধ শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ঢাকা না রংপুর, রংপুর, রংপুর’; ‘ঢাকা না কুমিল্লা, কুমিল্লা, কুমিল্লা’, ‘ঢাকা না রাজশাহী, রাজশাহী, রাজশাহী’; ‘ঢাবি না রাবি, রাবি, রাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ায় জনভোগান্তি বিবেচনা করে তিনদফা দাবি জানিয়ে রেললাইন অবরোধ প্রত্যাহার করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা।
এদিন দুপুর ১টার দিকে রাবির সমন্বয়ক ও সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০২০ সেশনের শিক্ষার্থী মেহেদী সজীব তিনদফা দাবি তুলে ধরে এই অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মেহেদী সজিব বলেন, ‘আমরা ঢাকাকেন্দ্রিক নিয়োগ ব্যবস্থার অবসান চাই। বাংলাদেশকে ঢাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত করতে হবে। ইউজিসি থেকে শুরু করে উপদেষ্টা নিয়োগ সব ক্ষেত্রে ঢাবির একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। আমরা এই নিয়োগ ব্যবস্থা মানি না। পিএসসি থেকে ইউজিসি পর্যন্ত সবকিছুর পুনর্গঠন চাই।’

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো,
১. নিয়োগে বিকেন্দ্রীকরণ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা: ইউজিসি, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুধু ঢাবির প্রভাব কমিয়ে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
২. পিএসসি ও ইউজিসির পুনর্গঠন: পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এবং ইউজিসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একক আধিপত্য বন্ধ করে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ঢাকা কেন্দ্রিকতা কমিয়ে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ: সরকারি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রিক না রেখে অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “আমরা ঢাকা কেন্দ্রিকতার বাইরে সারাদেশ থেকে নিয়োগের সমতা চাই। এই বাংলাদেশকে ঢাকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীকতা থেকে মুক্তি দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “ইউজিসি থেকে শুরু করে উপদেষ্টা নিয়োগে সব জায়গায় ঢাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্য। আমরা এ আধিপত্য মানিনা। আমরা পিএসসি থেকে শুরু করে ইউজিসি পর্যন্ত সবকিছুর পুর্নগঠন চাই।”
আরেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা জানান, আমরা ডিসেন্ট্রোলাইজড বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হলো ঢাবিকেন্দ্রিক আধিপত্যের বাইরে এসে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার দেওয়া। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়ায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ঢাবি সিন্ডিকেটের একচেটিয়া প্রভাবের অবসান ঘটিয়ে পিএসসি ও ইউজিসিতে সবার জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, আমাদেরও সেখানে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।”
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দিবাগত রাতে একই দাবিতে রাবি ক্যাম্পাসের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, ইউজিসি থেকে শুরু করে উপদেষ্টা নিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঢাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিপত্য রয়েছে। তারা সারাদেশে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানান এবং সকল ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ চান।