বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ ৭৮তম জন্মদিন। তার জন্মদিন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ স্টাটাস দিয়েছেন সাংবাদিক ও লেখক আনিস আলমগীর। জাগো নিউজের পাঠকের জন্য লেখাটি তুলে ধরা হলো—
‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ ৭৮তম জন্মদিন। দেশের উন্নয়নে অনেকে তার অনেক অবদানের কথা বলেন, আমি তাকে একটি কৃতিত্ব অবশ্যই দিতে চাই—বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের স্থল ও সমুদ্রসীমা চূড়ান্ত করার কাজটি তার সরকারই সম্পন্ন করেছে।
মাত্র এক বছর আগে, যার জন্মদিনে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছিল, তারা এবার তার জন্মদিনের সংবাদটি পর্যন্ত বর্জন করেছে। এই লেখা যখন লিখছি, তখন ঢাকা পোস্ট এবং বাংলা ট্রিবিউন নামের দুটি অনলাইন পোর্টাল শুধুমাত্র এই খবর প্রকাশ করেছে। টেলিভিশনে এই সংবাদ প্রচার হবে, তা তো কল্পনাও করতে পারছি না। নিরাপদ অবস্থানে থাকা দলীয় সুবিধাভোগী ছাড়া চাটুকারদের কারো বিশেষ কোনো পোস্ট ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে না।
৫ আগস্ট ২০২৪ ক্ষমতা হারানোর পর শেখ হাসিনার জন্য এটি আফসোস এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্র পাঠকদের জন্য এর চেয়ে বড় কৌতুক কী হতে পারে!
আমার বিশ্বাস, এমন নয় যে বর্তমান সরকার শেখ হাসিনার জন্মদিনের সংবাদ প্রচার করলে তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হতো, যেমনটা শেখ হাসিনার আমলে এই সংবাদটি প্রচার না করলে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষুব্ধ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
এটি পাঠকদের কাছে এই বার্তাও দেয়, এই দেশের মিডিয়া কখনোই স্বাধীন ছিল না। মিডিয়া সব সময় চাটুকারিতায় ব্যস্ত থাকে এবং খবর নিয়ন্ত্রণে সরকার থেকে তাদের নিজেদের হাতই বেশি সক্রিয় থাকে।
যাক, কারো জন্মদিনে খারাপ কিছু বলা অশোভনীয়; তাই জন্মদিন উপলক্ষে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
তবে এই দিনে তাকে অনুরোধ করবো, আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন দল, যার নাম এই দেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনি ৪৩ বছর ধরে এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন এবং পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
আপনি আপনার সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। পিতা, মাতা, ভাই, আত্মীয়-স্বজনের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেন। এমনকি প্রতিপক্ষের ওপর সমস্ত প্রতিহিংসাও চরিতার্থ করেছেন।
কিন্তু আর কত! আপনার রাজনীতি থেকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেওয়া বহু আগেই উচিত ছিল। বাঙালি তো থামতে জানে না, আপনিও থামেননি।
এবার ক্ষমতা হারিয়ে দয়াকরে থামুন। ৭৮তম জন্মদিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আপনার এবং শেখ পরিবারের প্রভাব থেকে মুক্ত করে দিন। এটি সৎ ও প্রগ্রেসিভ চিন্তার মানুষের জন্য রেখে যান। তারা দলটিকে পরিবারতন্ত্রের বাইরে নিয়ে আসুক। দেখবেন, দলের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিও পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্তি পায়নি। প্রধান দুটি দলে তাই গণতন্ত্র নেই।
আজকের দিনে সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করা দল এই দেশে অনুপস্থিত। থাকলেও তারা আওয়ামী লীগের মতো তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুসংগঠিত নয়। আপনি নিজেও আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে গড়ে তুলতে পারেননি। স্বাধীন দেশে বিভেদের রাজনীতির প্রধান কাণ্ডারি আপনি।
আপনার বাবা এবং আওয়ামী লীগ ছাড়া আপনি স্বাধীনতার কৃতিত্ব অন্য কাউকে দিতে চাননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত ও বিভেদের বিষয়ে পরিণত করেছেন। রাজনৈতিক ফায়দা নিতে গিয়ে আপনাকে এই ইস্যুতে দেশ ছাড়তেও হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের কিছু লাভ হয়, তবে আপনার বৃহত্তর শেখ পরিবার ও দলীয় দুর্বৃত্তদের লাভ তার চেয়েও বেশি হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলেও দেশের মানুষের উপকারে আসতে পারে। আওয়ামী লীগের মতো এত বড় কোনো প্রেসার গ্রুপ দেশে নেই, যা সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। সরকারকে চাপে রাখতে পারে।
আপনি আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না, দয়াকরে এই বাস্তবতাকে মেনে নিন। কারণ আপনার হাতে কমপক্ষে এক হাজার ছাত্র ও জনতার রক্ত লেগে আছে। আর আপনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে ফিরে আসা সেই শেখ হাসিনা থাকবেন না।
বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরশাসককে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসাবে না। তবে আপনি যদি আওয়ামী লীগকে শেখ পরিবার মুক্ত করে বিচক্ষণতা দেখান, তাহলে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসা কঠিন কিছু না।’