
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যে অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এটি উল্লেখ করা হয়।

রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র হস্তান্তর করেন।
কমিটি জানায়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন এবং ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র রিপোর্টে পাওয়া গেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই যুগান্তকারী কাজের জন্য কমিটিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর যে অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের গরীব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের বেশিরভাগ অংশই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্যাপক দুর্নীতির প্রভাব লক্ষ্যনীয়। এমনকি রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে জোট বেঁধেছিলেন সেই সময়ের শীর্ষ আমলারাও।
সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে বলে জানান কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, সমস্যাটি আমরা যতটা ভেবেছিলাম তার চেয়েও গভীর। এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে ক্রোনি পুঁজিবাদ অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে। কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন ডলার বা ৭,৮০,০০০ কোটি টাকা।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন সাথী, সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ।
আগামীকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তারপর ওই মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।