দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্মের সময় ধরা হয় ১৭৭৬ সালে। এরপর পার হয়েছে প্রায় ২৫০ বছর। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কোন নারী প্রার্থী এখন পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে সক্ষম হননি। আসন্ন নির্বাচনে কমালা যদি নির্বাচিত হন, তাহলে ইতিহাস গড়বেন তিনি। নাহলে, ইতিহাসের পাতার কোন এক পৃষ্ঠাইয় জায়গা হবে তার। তবে, মজার বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে মাত্র ২৪ জন নারী প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করেছেন। চলুন দেখে নেয়া যাক, কারা, কখন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ফাইট করেছেন।
১৮৭২ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ক্যাম্পেইন করেছিলেন ভিক্টোরিয়া ক্লাফ্লিন উডহুল। বলা যায়, নারীরা ভোট দেয়ার অধিকার পাওয়ার প্রায় ৫০ বছর পর একজন নারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নামেন। তার ক্যাম্পেইন কৃষ্ণবর্ণের নারীদের নিয়ে কাজ করেছিলো।
এরপর পার হয়েছে প্রায় ১০০ বছর। ১৯৬৪ সালে, রিপাবলিকান সেনেটর মার্গারেট চেজ স্মিথ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। মার্কিন ইতিহাসে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী নারীদের একজন। মার্কিন ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী হিসেবে চেম্বারস অব কংগ্রেস ইলেকটেড হন।
১৯৭২ সাল মার্কিন নারীদের জন্য ঐতিহাসিক। ১৯৭২ সাল মার্কিন নারীদের জন্য ঐতিহাসিক। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে, শার্লি অনিতা চিশোলম কংগ্রেসে ইলেকটেড হন। অন্যদিকে, প্রথম এশিয়ান-আমেরিকান হিসেবে প্যাটসি মিঙ্ক কংগ্রেসে ইলেকটেড হন।
এরপর ২০০০ সাল থেকে অন্তত একজন নারী প্রত্যেক ইলেকশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম এলিজাবেথ ডোল, ক্যারল মসেলি ব্রাউন, হিলারি ক্লিনটন (একজন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মার্কিন সিনেটর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি) , মিশেল বাচম্যান (যিনি ইউএস হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর সদস্য হিসাবে কাজ করেছিলেন, রক্ষণশীল বিষয়গুলির সমর্থনের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন), কার্লি ফিওরিনা (২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় মার্কিন সিনেটের জন্য রিপাবলিকান মনোনীত ছিলেন), তুলসি গাব্বার্ড (কমপক্ষে ২০ বছর ডেমোক্রেট রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি), কার্স্টেন গিলিব্র্যান্ড (২০০৯ সালে নিউইয়র্ক থেকে মার্কিন সিনেটে ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিযুক্ত হন এবং পরের বছর তিনি এই সংস্থায় নির্বাচিত হন), এলিজাবেথ ওয়ারেন (প্রাক্তন আইন অধ্যাপক যিনি ম্যাসাচুসেটস থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র সিনেটর হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন) ও নিকি হ্যালি (যিনি ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ক্যারোলিনার ১১৬তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন)।
সবশেষ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হ্যারিস। মাত্র মাস তিনেক আগেও ছিলেন সাইডলাইনে। জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে খুলে যায় কপাল। চব্বিশের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর মনোনয়ন পেয়ে নেমে পড়েন ভোটের ময়দানে। সঙ্গে সঙ্গেই বৈশ্বিক রাজনীতির অর্ধেক দৃষ্টি নিজের দিকে করে নেন তিনি। লড়াইয়ে নেমে ডেমোক্র্যাট শিবিরকে উজ্জীবিত করেছেন। আভাস মিলছে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতার। জয় পেলে কমালা হ্যারিসই হবেন আমেরিকার প্রথম কোনো নারী প্রেসিডেন্ট, সে কথা সবার জানা।
সেই দৌঁড়ে পৌঁছানোর আগেই তিনি নিজের নামের পাশে যুক্ত করেছেন একাধিক নতুন পরিচয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দলের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হ্যারিস। একাধারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দক্ষিণ এশীয় (ভারতীয়) আমেরিকান সিনেটর; ক্যালিফোর্নিয়ার প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় অ্যাটর্নি জেনারেল; সানফ্রান্সিসকোর দক্ষিণ এশীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ জেলা অ্যার্টনি; যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী ও প্রথম এশিয়ান আমেরিকান।
দেখা যাক, মোট ২৪ জন নারীর মধ্যে কমালা রেকর্ড করতে পারেন কি না!